ভৌগলিক পরিচিতি
বৃহত্তর বরিশালের ইতিহাস প্রকারান্তরে এ অঞ্চলের নদী-নালারই ইতিহাস। সমগ্র এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় এই ভূখণ্ডটিকে নিয়ে ভাঙা-গড়ার খেলায় ব্যস্ত থেকে প্রতিনিয়ত তৈরি করেচলেছে নতুন ইতিহাস। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি এই অঞ্চলে বয়েচলা নদ-নদী সমূহের অবিশ্রান্ত সৃষ্টি আর ধ্বংসের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। চন্দ্রদ্বীপ-বাকলা নামের ভূখণ্ডের বয়স মাত্র পঞ্চাশ হাজার বছরের কাছাকাছি। সৃষ্টির শুরু থেকেই এ ভূখণ্ডটি ভাঙা-গড়ায় বারবার আপন রূপ পরিবর্তন করেছে। আর সেজন্যেই চন্দ্রদ্বীপ-বাকলার বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-গঠনে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।
বর্তমান কালের গৌরনদী, উজিরপুর, বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠি, হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, নলছিটি, ঝালকাঠি, বেতাগী, রাজাপুরকাউখালী, ভাণ্ডারিয়া, পিরোজপুর, নাজিরপুর, মীর্জাগঞ্জ, বাউফল, বোরহানউদ্দিন প্রভৃতি অঞ্চল সমূহ বরিশালের প্রথম পর্যায়ের সৃষ্ট ভূখণ্ডের অন্যতম।
দ্বিতীয় পর্যায়ে সৃষ্টি হওয়া ভূখণ্ডের তালিকায় রয়েছে কাঁঠালিয়া, আমতলী, গলাচিপাওদৌলতখান।
তৃতীয় পর্যায়ে সম্পন্ন হয় বরগুনা, পাথরঘাটা, খেপুপাড়া ও মনপুরার ভূমি গঠনের প্রক্রিয়া।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সৃষ্ট ভূখণ্ডের স্থান বিশেষ অদ্যাবধি ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিত্য নতুন ভূ-গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল অঞ্চলের নিম্ন সমতল ভূমির কলেবরে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে। ভূমি বৃদ্ধির এই চলমান প্রক্রিয়া বৃহত্তর বরিশালকে একটি সক্রিয় ব-দ্বীপে পরিণত করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান
বরিশাল জেলা ২২০৪২' ০'' উত্তর অক্ষাংশে ও ৯০০২২' ০'' পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত।
আয়তন : জেলার মোট আয়তন ২,৭৯১ বর্গকিলোমিটার।
সীমানা :
বরিশাল জেলার উত্তরে চাঁদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা; দক্ষিণে ঝালকাঠি, বরগুনা ওপটুয়াখালী জেলা; পূর্বেলক্ষ্মীপুর জেলা ও মেঘনা নদী এবং পশ্চিমে পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও গোপালগঞ্জ জেলা অবস্থিত।
লোকসংখ্যা :
জেলার লোক সংখ্যা (২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী) ২৩ লক্ষ ৭৭১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৭ জন এবং মহিলা ১১ লক্ষ ৭২ হাজার ৭১৪ জন।
মৃত্তিকা : জেলার মধ্যভাগে ও অভ্যন্তরে এবং উত্তরাঞ্চলে মাটি প্রধানত শক্ত কর্দমাক্ত । আমন ধান চাষের জন্য এ ধরনের মাটি খুবই উৎকৃষ্ট। কর্দমাক্ত মাটি জেলার পশ্চিমাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত কম। প্লাবন এলাকা থেকে দূরে অবস্থিত উচ্চতর জমিতে স্বাভাবিক নিয়মেই উর্বরতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষিত হয়ে যায় । কারণ প্লাবন বাহিত পলি প্রতি বছর এসব অঞ্চলে নতুন করে সঞ্চিত হতে পারে না। জেলার উত্তরাংশ থেকে দক্ষিণাংশে কর্দমাক্ত মাটির আধিক্য কম । অবশ্য শেষোক্ত অঞ্চলে জঙ্গল, গাছপালা ও তৃণাদি পচে গিয়ে স্বভাবতই অঞ্চলটিকে সজীব ও উর্বর করে রেখেছে। কর্দমাক্ত মাটিতে শুরুতে ধান চাষে খুবই সুফল দেখা গেলেও ক্রমান্বয়ে জমির উর্বরতা নিঃশেষিত হয়ে গেলে বহুলাংশে ফলনের পরিমাণ হ্রাস পায়। বাৎসরিক প্লাবনে নতুন পলির আস্তরণ না পড়লে এর উর্বরা শক্তির নবায়ন ঘটে না। চাষের ক্ষেত্রে এসব অসুবিধা সত্ত্বেও এটা বলা চলে যে, হেমন্তে জেলার সমস্ত চাষোপযোগী জমি সোনালী আমন ধানে ভরে ওঠে।